বিয়ের পূর্বে মানসিক প্রস্তুতি ।

বিয়ে করার পূর্বে  মানসিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন । মনে রাখতে হবে এটা কোন ছেলে-খেলা নয় যে এই সিদ্ধান্ত বার বার পরিবর্তন করা যাবে । কারণ বিয়ে হল মানুষের জন্য  মহান  আল্লাহর এক অনন্য উপহার । বিবাহ একজন পুরুষ বা মহিলার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । মহানবী (সা.)-এর সুন্নতের অংশ হিসেবে আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছেন। ঈমানের পরিপূর্ণতায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে বিবাহ ।

একজন পুরুষ এবং মহিলার পূন্যময়- চরিত্র বিকাশের অন্যতম উপাদান হলো বিবাহ  । একটি আদর্শ পরিবার তৈরি করতে, মানুষের মৌলিক ও  জৈবিক চাহিদা মেটাতে এবং মানসিক শান্তি অর্জনের জন্য বিবাহ হল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার,

তাই বিবাহের পূর্বে শারীরিক ও  অর্থনৈতিক  প্রস্তুতির  সাথে সাথে অবশ্যই মানসিকভাবে শতভাগ প্রস্তুত থাকা বর-কনে  দুজনের জন্যই  অত্যন্ত প্রয়োজন।

তাই নিম্নে হবু স্বামী-স্ত্রীর জন্য  গুরুত্বপূর্ণ  কতিপয়  মানসিক প্রস্তুতির ব্যাপারে আলোচনা করা যায়:

  • মানিয়ে নিতে শিখুন।

বিয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতির অন্যতম  ধাপ হল মানিয়ে নিতে শেখা। বিয়ের পর সব ধরনের ছেলেমানুষি দূর করে একে অপরের সঙ্গে সংসার করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব নিয়ম-কানুন রয়েছে। সেই নিয়মগুলো একটু আগে থেকে জানা থাকলে পরবর্তী সময়ে নতুন সদস্যদের বোঝা সহজ হয়। আমাদের সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী, মেয়েরা তাদের ক্রমবর্ধমান সঙ্গকে ছেড়ে বিয়ের পর সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে চলে যায়। সেখানে তাকে একেবারে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে শুধু মেয়েরাই মানিয়ে নেবে, যাতে তা না হয়। মনে রাখবেন বিয়ের পর মেয়েদের জীবনে একটা বড় পরিবর্তন আসে। তাকে তার বাড়ি ছেড়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছেলের বাড়িতে থাকতে হয়।

 

  • বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করুন।

মানসিক প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়  হল বিয়ের বাস্তবতাকে  বোঝার চেষ্টা করা। কিছু মানুষ তাদের নিজস্ব চিন্তা বা ইচ্ছার ভিত্তিতে বৈবাহিক সম্পর্কের বাস্তবতা বুঝে থাকে ।  আবার অনেক ছেলে বা মেয়েই এটা আগে থেকে বুঝে না। জীবনের বাস্তবতা বোঝার ক্ষমতা সবার থাকেও না। সেক্ষেত্রে বাবা-মা বা তাদের কাছের কেউ তাদের সন্তানদের জীবনের বাস্তবতা বুঝিয়ে মানসিক প্রস্তুতি সম্পর্কে সচেতন করতে পারেন।

 

  • প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেকে পরিবর্তন করুন।

আপনার কোনো স্বভাবে নেগেটিভ দিক থাকলে বিয়ের আগে তা সংশোধন করে নিন । সম্ভাব্য  স্বামী-স্ত্রী যদি তাদের দাম্পত্য জীবনের সব রকমের ভালো মন্দ  দিক গুলো নিয়ে  আলোচনা করেন তাহলে নতুন জীবনের  শুরুটা ভালো হবে। ভালো র পাশাপাশি খারাপকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। ছেলে  মেয়ে দুজনই যদি  একে অপরের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকে,  তাহলে  দাম্পত্য জীবনে অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব হয়  ।

 

  • আগাম হতাশা থেকে দূরে থাকুন।

অনেকে মনে করেন বিয়ে মানেই ঘরে অশান্তি। এটা নিয়ে ভাবার কোনো ভালো কারণ নাও থাকতে পারে। কারণ, আপনি যখন আপনার সঙ্গীর দোষ-ত্রুটি মেনে নেবেন, তখন তার সমস্যা সমাধানের দায়িত্বও আপনার। তাই পারিবারিক হতাশা থেকে দূরে থাকুন, নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। বিয়ের পর আপনার সমস্ত সমস্যা আপনার সঙ্গীর সাথে শেয়ার করার মানসিকতা তৈরি  করুন। আর  একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার চিন্তা মাথায় রাখুন ।

 

  • বউ শাশুড়ি ফ্যাক্টর ।

অনেক মেয়েই তাদের শাশুড়িকে নিয়ে চিন্তিত।আবার অনেক  শাশুড়ি নতুন বউমাকে নিয়ে চিন্তিত থাকেন।  বিয়ের আগে সুযোগ থাকলে ছেলের পরিবার মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে পারে। যাইহোক, শুরুতে, মেয়েটিকে বা শাশুড়িকে নেতিবাচক  দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু ভাবা  উচিত নয়।

 

  •  মেয়ে হিসেবে সাহসী হউন ।

একজন মেয়ে হিসেবে আপনি ভাববেন, আপনি নতুন জায়গায় যাচ্ছেন,  কিন্তু  নতুন মানুষ যাচ্ছেন না; আপনি যাদের কাছে যান তারা আপনার জীবনের একটি অংশ, যাই হোক না কেন।আপনি অবশ্যই দরদের সাথে সাহস রাখুন ।

 

শেষ কথা।

বিবাহ মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । এটি জীবনকে সুন্দর  ও পরিপূর্ণ  করে তোলে। এই সুন্দর সম্ভাবনাময় জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলা যায় যদি নবদম্পতি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে।তাই বিবাহের  পূর্বে সম্পূর্ণ রূপে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন এবংসৃষ্টিকর্তার প্রতি  ভরসা রাখুন ।  তাহলে  সম্পর্ক হবে স্থায়ী , সুন্দর, সৌম্য, সুখময় ও  পবিত্রতম।